একলাব — শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ প্রচারাভিযান: শব্দদূষণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক

1:54:00 AM

বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে। এই বিশ মিলিয়ন শব্দদুষণের শিকার জনসংখ্যার ৭ মিলিয়ন হচ্ছে রাজধানী ঢাকা শহরে, ২.৫ মিলিয়ন অন্যান্য মহানগরগুলিতে এবং ৪ মিলিয়ন ৬৪টি জেলার জনগন। বর্তমানে এমনকি মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের জনসাধারনও শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে। মানুষের জন্য শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ ডেসিবল কিন্তু বাংলাদেশে শব্দ দূষণের মাত্রা ৮০ থেকে ৮৫ ডেসিবল, এটা খুব বেশী যা রীতিমত মানবদেহ এবং মানসিক অবস্থার জন্য ঝুকিপুর্ন এবং ক্ষতিকর। শব্দদূষনের কারনে হৃদযন্ত্রের যাবতীয় রোগ-ব্যাধিসহ উচ্চ রক্তচাপ, হতাশাগ্রস্থ থেকে মানসিক ব্যাধি, এজমা, মাথাব্যাথা, এবং আরো অনেক অসুখ হতে পারে। বাংলাদেশে শব্দদূষনের মুল কারন, যাবতীয় যানবাহনের পুরোনো ভার্সন ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার যেমন বাস, ট্রাক এবং স্কুটারে ব্যবহূত হাইড্রোলিক ভেঁপু শহরের জনপূর্ণ সড়কে চলমান নারী-পুরষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়; এছাড়াও পর্যাপ্ত ও সঠিক রাস্তা ব্যবস্থাপনার অভাব, প্রকৌশলী নির্মান প্রক্রিয়া, শিল্প-কারখানা, অটোমোবাইল, বাদ্যযন্ত্র, লাউড স্পিকার, এবং বিভিন্ন প্রকার ইনডোর ও আইটডোর কার্যক্রমসমুহ। ঢাকা শহরের শব্দ দূষণ এভাবেই প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার শিশুর শ্রবণ ক্ষমতাকে ধ্বংস করছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি তিন বছরের কম বয়স্ক শিশু কাছাকাছি দূরত্ব থেকে ১০০ ডিবি মাত্রার শব্দ শোনে, তাহলে সে তার শ্রবণ ক্ষমতা হারাতে পারে। বেশকিছু বছর যাবত একলাব বাংলাদেশে শব্দ দুষণের উপরে বিভিন্ন প্রকার জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং শব্দ দূষন বন্ধের জন্য প্রচারাভিযান, র‌্যালি, মানব বন্ধন, রেডিও অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ও অফলাইন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
 পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুসারে বাংলাদেশের জন্য যথার্থ শব্দমাত্রা শান্ত এলাকায় দিবাভাগে ৪৫ ডিবি ও রাত্রিকালে ৩৫ ডিবি, আবাসিক এলাকায় দিবাভাগে ৫০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৪০ ডিবি, মিশ্র এলাকায় (আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা) দিবাভাগে ৬০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৫০ ডিবি, বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাভাগে ৭০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৬০ ডিবি এবং শিল্প এলাকায় দিবাভাগে ৭৫ ডিবি ও রাত্রিকালে ৭০ ডিবি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অপর একটি জরিপে দেখা যায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশে শব্দ দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরিপে চিহ্নিত করা হয়েছে দিবাভাগে শাহীন স্কুল এলাকায় এ মাত্রা ৮৩ ডিবি ও রাত্রিকালে ৭৪ ডিবি, মতিঝিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দিবাভাগে ৮৩ ডিবি ও রাত্রিকালে ৭৯ ডিবি, ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয়ে দিবাভাগে ৮০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৭৫ ডিবি, আজিমপুর মহিলা কলেজে দিবাভাগে ৮০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৭৪ ডিবি, তেজগাঁও মহিলা কলেজে দিবাভাগে ৭৫ ডিবি ও রাত্রিকালে ৬৭ ডিবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবাভাগে ৮২ ডিবি ও রাত্রিকালে ৭৪ ডিবি, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দিবাভাগে ৮০ ডিবি ও রাত্রিকালে ৬৯ ডিবি, মিটফোর্ড হাসপাতালে দিবাভাগে ৭৫ ডিবি ও রাত্রিকালে ৭৩ ডিবি এবং শিশু হাসপাতালে দিবাভাগে ৭২ ডিবি ও রাত্রিকালে ৬৯ ডিবি।

বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুসারে দেখা যায় উচ্চ শব্দ জনসাধারণের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ। এটি উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ হূদস্পন্দন, মাথ্যাব্যথা, বদহজম ও পেপটিক আলসার সৃষ্টির কারণ, এমনকি গভীর ঘুমকেও ব্যাহত করছে। যেকোন ব্যক্তি যেকোন স্থানে আধঘণ্টা বা তার অধিক সময় ধরে ঘটা ১০০ ডিবি বা তার অধিক শব্দ দূষণের ফলে বধির হয়ে যেতে পারে। উচ্চমাত্রার শব্দের কর্ম পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে যেকোন ব্যক্তির সম্পূর্ণ বধিরতা দেখা দিতে পারে। যেকোন ধরনের শব্দ দূষণ গর্ভবতী মায়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দেখা গেছে বড় বিমান বন্দরের সন্নিকটে বসবাসকারী গর্ভবতী মায়েরা অন্যান্য স্থানে অবস্থানকারী মায়েদের তুলনায় অধিক সংখ্যক পঙ্গুত্ব, বিকৃত এবং অপরিণত শিশু জন্ম দিয়ে থাকেন।

শব্দদূষণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক।
উচ্চমাত্রার শব্দ শ্রবনশক্তি হ্রাস ও শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি করে,
হৃদযন্ত্রের কম্পন বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুদের বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্থ করে।

আসুন সবাই শপথ করি, শব্দদূষণ মুক্ত পরিবেশ গড়ি।
শব্দদূষণ বিধিমালা মেনে চলি, হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকি।


যানবাহনের আরোহীর প্রতি অনুরোধ:
লক্ষ্য রাখুন আপনার গাড়ির চালক অপ্রয়োজনে হর্ন বাজাচ্ছে কিনা, বাজালে নিষেধ করুন।


গাড়ি চালকদের প্রতি অনুরোধ:
অপ্রয়োজনে এবং স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, আবাসিক ও মার্কেট এলাকায় হর্ন বাজাবেন না।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ প্রচারাভিযান
এলায়েন্স ফর কোঅপারেশন এন্ড লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ (একলাব)
পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়

যোগাযোগ: একলাব - শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ প্রচারাভিযান, ৮/১৩ তাজমহল রোড, ব্লক - সি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা - ১২০৭, বাংলাদেশ। ফোন: (+৮৮) ০১৯১১৩৪৯১১৮, ০১৯৯১৭০৮৮২৯, (০২) ৮১২৯৪০০। ইমেইল: tarikul1964@gmail.com, ওয়েবসাইট: www.aclab-bd.org

You Might Also Like

0 comments